ময়মনসিংহ থেকে সিরাজুল হক ময়মনসিংহে আওয়ামী সন্ত্রাসীদের তাণ্ডবে সাড়ে ১৫ বছর ঘর ছাড়া দৈনিক জনতা পত্রিকার পাগলা প্রতিনিধি মুহিবুল্লাহ। আদালতে মামলা করেও নিজ বাড়িভিটায় ফিরতে পারছেন না। আওয়ামী লীগের শাসনামলে তার বাড়িঘর জমিজমা সব দখল করে নেয় সন্ত্রাসীরা। ব্যবসা প্রতিষ্ঠান জমিসহ টাকা পয়সা সব লুট করে নিয়ে পথে বসিয়েছে তাকে। শেখ হাসিনা ৫ আগস্ট দেশ থেকে পালিয়ে যাওয়ার পর ময়মনসিংহ বিজ্ঞ আদলতে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে মামলা করলে, আদালত পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। তদন্তে দীর্ঘদিন কালক্ষেপণ করে অবশেষে আদালতে ফাইনাল চার্জশীট দেন পিবিআই। চার্জশীটে মিথ্যা তথ্য দেয়া, স্বাক্ষীদের জবানবন্দীতে ভুল তথ্য উত্থাপন বাদীর ঠিকানা ইচ্ছাকৃতভাবে ভুল লিখে দাখিল করাসহ ব্যাপক অনিয়ম হয়েছে বলে বাদী আদালতে নারাজি দাখিল করেছেন। এমনকি ইতিমধ্যে তিনজন স্বাক্ষী নোটারী পাবলিকের মাধ্যমে এফিডেভিট মূলে তারা জানান, পিবিআই তদন্ত করে তাদের সঠিক জবানবন্দী লিপিবদ্ধ না করে তদন্ত কর্মকর্তা আসামীদের প্রভাবিত হয়ে মিথ্যা প্রতিবেদন দাখিল করেছে। এমনকি তাদের ঠিকানাও সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে নাই। তারা এফিডেভিটে জানান, বাদীর আনীত অভিযোগের প্রত্যক্ষ স্বাক্ষী তারা। বাদীর আনীত অভিযোগ সম্পূর্ণ সত্য। তাই তারা ভবিষ্যতে কর্ম এড়াতে এই এফিডেভিট করেন। যাহার এফিডেভিট নং-১২০৮, তারিখ-১৫/০৬/২০২৫ ইং। এফিডেভিটকারী যথাক্রমে শারমীন সুলতানা, সাইফুল ইসলাম ও মিনহাজ উদ্দিন খান। সূত্রমতে, গত ১৩/০৩/২০২৫ ইং তারিখ ময়মনসিংহ পিবিআই পুলিশ সুপার উক্ত মামলার তদন্তে যান বাদীর বাড়ির আঙ্গিনায় পিও স্থলে। ময়মনসিংহের পাগলা থানার সাধুয়া গ্রামের মৃত আব্দুল মজিদ খানের পুত্র মহিবুল্লাহ দৈনিক জনতার পাগলা থানার প্রতিনিধি হিসেবে কর্মরত আছেন। স্ত্রী, পুত্র ও কন্যা নিয়ে সুখেই চলছিল তার সংসার। আওয়ামীলীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর বিএনপির সমর্থক হওয়ায় আওয়ামী নেতাকর্মীর প্রতি হিংসার শিকার হন তিনি। এলাকায় একটি খুনের ঘটনা দৈনিক জনতায় সংবাদ প্রকাশ হওয়ার পর তার উপর ক্ষিপ্ত হন এলাকার আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। তাকে হত্যার ভয় দেখিয়ে এলাকা ছাড়া করেন। সে জীবন বাঁচাতে পাশ্ববর্তী শ্রীপুর উপজেলায় বসবাস করতে থাকে। তার স্ত্রী পুত্র কন্যা নিজ বাড়ি সাধুয়া গ্রামে থাকতেন। গত ৩০ মার্চ ২০১৩ ইং তারিখ রাত ৮ টায় সাধুয়া গ্রামে মৃত আব্দুল রহমান খাঁ পুত্র জাকারিয়া খান এর নেতৃত্বে ২০/২৫ জনের একটি সন্ত্রাসীর দল দেশীয় অস্ত্র-শস্ত্রসহ তার বাড়ি ঘরে হামলা চালায়। তাকে না পেয়ে তার স্ত্রীর হাতপা বেঁধে মারধর করে। স্ত্রীর কাছ থেকে জোরপূর্বক আলমারীর চাবি নিয়ে টাকা পয়সা স্বর্ণালংকার ঘরে সমস্ত কাপড় চোপর মূল্যবান মালামাল লুট করে নেয়। ছেলেকে টিপিয়ে জখম করে। ঘটনার সময় মুহিবুল্লাহ শ্রীপুরে অবস্থান করছিল। মুহিবুল্লাহ মোবাইল ফোনে খবর পেয়ে ভাড়া করা মোটরসাইকেলে নিজ বাড়ি সাধুয়া আসার পথে রাত ১০ টায় সাধুয়া প্রাইমারি স্কুলের সামনে আসামাত্র তাকে সন্ত্রাসীরা তাকে ঘিরে ফেলে। মোটরসাইকেল ড্রাইভারকে বিদায় করে দেয়। ছাপিলা গ্রামের নাছিমের হুকুমে তার মাথায় কোপ দেয় হুমায়ুন নামের সন্ত্রাসী এবং অন্যান্য সন্ত্রাসীরা তাকে পিটিয়ে গুরুত্বর আহত করে মৃত ভেবে রেখে ফেলে চলে যায়। পরে স্থানীয় অজ্ঞাত ব্যক্তিরা তাকে উদ্ধার করে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করে। মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়। দীর্ঘদিন চিকিৎসা করে সুস্থ হন। এ বিষয়ে মামলা করতে গেলে পুলিশ তার মামলা নেয়নি। ভুক্তভোগী দৈনিক জনতার সাংবাদিক মুহিবুল্লাহ জানান, সন্ত্রাসীরা বাড়ির টিনের ঘর, পাকা দেয়ালের ইট পর্যন্ত সবই খুলে নিয়ে গিয়েছিল। ঘরের যাবতীয় মালামাল কিছুই রাখেনি সবই লুট করে নিয়ে যায়। ৫ই আগষ্ট ছাত্র জনতার আন্দোলনে আওয়ামী সরকারের পতনের পর বাড়ি ঘর ছাড়া অনেকেই বাড়িতে ফিরলেও সে তার বাড়িতে যেতে পারছে না সন্ত্রাসীদের ভয়ে। সন্ত্রাসীরা এখনও সক্রিয়। তাকে মিথ্যা মামলাসহ বিভিন্নভাবে হয়রানি করার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছে। মুহিবুল্লাহ সাড়ে ১৫ বছর পর গত ১০/০৯/২০২৪ ইং তারিখে ময়মনসিংহ সিনিয়র ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে সাধুয়া গ্রামের মৃত আব্দুর রহমানের পুত্র জাকারিয়াসহ ৯ জনকে আসামী করে মামলা দায়ের করেন, মামলা নং ৪০৯/২৪। মামলাটি বিজ্ঞ আদালত পিবিআইকে তদন্ত করার নির্দেশ দেন। কিন্তু পিআইবি তদন্ত কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে দুই দিন যান এবং পিআইবি পুলিশ সুপারও ঘটনাস্থলে যান। তদন্তকালে তদন্ত কর্মকর্তা আসামীদের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে মামলাটির বাদী ও তার শিশু সাত বছরের কন্যার সাথে অশালীন আচরণ করেন। তদন্ত কর্মকর্তা স্বাক্ষীদের জবানবন্দী, ঠিকানা সহ অনেক ভুল তথ্য চার্জশীটে উল্লেখ করে জমা দেন। তাই তিনি উক্ত চার্জশীটের বিরুদ্দে আদালতে নারাজি দাখিল করেছেন। এ ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে ভুক্তভোগী।